রাশিয়ার হামলার সর্বশেষ তরঙ্গ একাধিক শহরকে অন্ধকারে ফেলে দেওয়ার পরে ইউক্রেন শনিবার বিদ্যুৎ এবং পানি সরবরাহ পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছিল এবং লোকেরা গরম বা প্রবাহিত পানি (টেপের পানি) ছাড়াই শূন্য ডিগ্রির নিচের তাপমাত্রা সহ্য করতে বাধ্য হয়েছে।প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের তত্ত্বাবধানে থাকা সামরিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে দীর্ঘ বৈঠক করার সময় মস্কো শুক্রবার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সংখ্যা বাড়িয়েছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, শনিবার দিনের শেষের দিকে প্রায় ৬ মিলিয়ন ইউক্রেনীর বিদ্যুৎ পুনরুদ্ধার করা হয়েছে, তবে উষ্ণতা এবং পানি সরবরাহের চলমান সংকট অনেক অঞ্চলে ‘বড় আকারের সংকট’ তৈরি করেছে। ‘আজকের প্রধান বিষয় হল জ্বালানি’ এ কথা উল্লেখ করে তিনি তার রাতের ভাষণে বলেন, ‘এসব ব্যবস্থাকে স্থিতিশীল করতে এখনও অনেক কাজ বাকি আছে।’রাজধানী কিয়েভে মেট্রো চালানো বন্ধ করে দিয়েছিল যাতে শীতের কোটে মোড়ানো লোকেরা ভূগর্ভস্থ স্টেশনগুলোতে আশ্রয় নিতে পারে, তবে মেয়র ভিটালি ক্লিটসকো শনিবার বলেছেন, পরিষেবাটি আবার শুরু হয়েছে।এরআগে পানি সরবরাহও পুনরুদ্ধার করা হয়েছিল এবং শহরের জনসংখ্যার ৭৫ শতাংশ তাদের উষ্ণতার জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ ফিরে পেয়েছিল।পূর্বাঞ্চলীয় শহর খারকিভে পুরোপুরি বিদ্যুৎ ফিরে এসেছিল, শনিবার আঞ্চলিক গভর্নর ওলেগ সিনেগুবভ বলেছেন, শুক্রবারের হামলার পর ইউক্রেনের দ্বিতীয় এই শহর বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েছে।ইউক্রেনের জাতীয় বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ইউক্রেনারগো রাশিয়ান হামলার প্রতিক্রিয়ায় জরুরি ব্ল্যাকআউট আরোপ করেছিল, দেশের উত্তর, দক্ষিণ এবং কেন্দ্রে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে সতর্ক করে বলেছিল যে, আগের হামলার পরে সরবরাহ পুনরুদ্ধার করতে যে সময় লেগেছিল এবার আরও বেশি সময় লাগতে পারে।
সংস্থাটি শনিবার বলেছে, দেশটির বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ‘পুনরুদ্ধার অব্যাহত রয়েছে’।ক্রেমলিন জানায়, ইউক্রেন অভিযান কিভাবে এগিয়ে নিতে হবে পুতিন তার সামরিক কমান্ডারদের কাছ থেকে সে বিষয়ে প্রস্তাব চেয়েছিলেন।ক্রেমলিন শুক্রবার ফুটেজ প্রকাশ করেছে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সের্গেই শোইগু এবং চিফ অফ জেনারেল স্টাফ ভ্যালেরি গেরাসিমভের সাথে অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় নেতাদের একটি গোলটেবিল বৈঠকে পুতিন সভাপতিত্ব করছেন।যুদ্ধক্ষেত্রে একের পর এক অপমানজনক পরাজয়ের পরে রাশিয়া অক্টোবর থেকে বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে, মস্কো বলেছে তারা ইউক্রেনের সামরিক স্থাপনার বিরুদ্ধে এই হামলা চালিয়েছে। তবে ফ্রান্স এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে, বেসামরিক নাগরিকদের যে তীব্র ঠান্ডার দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এটিই যুদ্ধাপরাধ, ব্লকের পররাষ্ট্র নীতি প্রধান এই বোমা হামলাকে ‘বর্বর’ বলে অভিহিত করেছেন।রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয় শনিবার বলেছে, হামলাগুলো ইউক্রেনের সামরিক ও বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করেছে, পাশাপাশি ‘বিদেশী অস্ত্র ও গোলাবারুদ স্থানান্তর’ ব্যাহত করেছে।মন্ত্রণালয় তার দৈনিক ব্রিফিংয়ে বলেছে, ‘সমস্ত নির্ধারিত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করা হয়েছে।’ইউক্রেনের সেনাবাহিনী বলেছে, রাশিয়া শুক্রবার ৭৪টি প্রধানত ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে, যার মধ্যে ৬০টি ইউক্রেনের বিমান বিধ্বংসী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রতিরোধ করেছে। ইউক্রেনের সামরিক কমান্ড শনিবার এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘পূর্ব ডোনেৎস্ক অঞ্চলের দুটি শহরকে লক্ষ্য করে আক্রমণের জন্য তাদের প্রচেষ্টা কেন্দ্রীভূত করে চলেছে।’বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, রাশিয়ান সৈন্যরাও দক্ষিণে লিমানস্কির আশেপাশে হারানো জায়গা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে।জেলেনস্কি বলেছেন, হামলার কারণে কিয়েভ এবং ১৪টি অঞ্চলে বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।আঞ্চলিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাদের বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী ৪০টির মধ্যে ৩৭টি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করেছে।মধ্যাঞ্চলীয় ক্রিভি রিগ শহরে যেখানে জেলেনস্কির জন্ম হয়েছিল, শুক্রবারের সেখানে একটি আবাসিক ভবনে বিমান হামলা চালানো হয়।এই হামলায় ৬৪ বছর বয়স্ক এক নারী এবং এক পুত্র সন্তানসহ এক দম্পতির মৃত্যু হয়েছে, অপর ১৩ জন আহত হয়েছে।