শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় সিক্ত হলেন জাতির অমর শ্রেষ্ঠ সন্তানরা। ভোরের আলো ফুটতেই বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ গুলোতে ঢল নামে সর্বস্তরের মানুষের।
আজ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে শ্রদ্ধা জানাতে আসা মানুষের কণ্ঠে ছিল উন্নত-সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়। ছিল ইতিহাস বিকৃতকারীদের রুখে দেয়ার শপথ। সাম্প্রদায়িক শক্তির ধারক-বাহকদের প্রত্যাখ্যান এবং নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগিয়ে তুলতে সঠিক ইতিহাসের চর্চার দাবীও ছিল মানুষের মাঝে।
একই সাথে দিবস টি উপলক্ষে আয়োজিত বিভিন্ন সমাবেশ থেকে বিদেশে পালিয়ে থাকা বুদ্ধিজীবী হত্যাকারিদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের রায় দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানানো হয়েছে।
দিবসটি উপলক্ষে সকালে কালো পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করণ, শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা, শহীদদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্জলন, শোক র্যালি, শ্রদ্ধা নিবেদন, চিত্রাঙ্কন, সাধারণ জ্ঞান ও হাতের লেখা প্রতিযোগিতা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
১৯৭১ সালের এই দিনে চুড়ান্ত বিজয়ের মাত্র দুদিন আগে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা পরিকল্পিতভাবে দেশের কৃতী সন্তানদের হত্যা করে। তারপর থেকে দিনটি শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধা জানাতে সকালে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে সর্বস্তরের মানুষের ঢল নেমেছিল। ভোরের সূর্য ওঠার আগেই হাজারো মানুষ ভিড় করেন মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের সামনে। সবার হাতে ছিল ফুলের তোড়া ও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে লেখা কালো ব্যানার।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ের একদিন আগে দেশ ও জাতির জন্য আত্মোৎসর্গকারী মহান বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সকাল ৭টায় পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর রাষ্ট্রপতি সেখানে কিছুক্ষণ নিরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় বিউগলে করুণ সুর বেজে ওঠে।
পুষ্পস্তবক অর্পণের পর রাষ্ট্রপতি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের খোঁজ-খবর নেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
পুষ্পস্তবক অর্পণের পর জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেখানে কিছুক্ষণ নিরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।
এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। এ সময় বিউগলে করুণ সুর বেজে ওঠে।
মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ, সংসদ সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র এবং উচ্চ পর্যায়ের সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা দলীয় প্রধান হিসেবে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে আরেকটি পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
এছাড়াও স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর উপস্থিত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যদের সাথে কুশল বিনিময় করেন তিনি।