রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে তাঁদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে মিয়ানমার গড়িমসি করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশংকা ব্যক্ত করেছেন, এখানে কর্মরত আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলোও সমস্যাটি জিইয়ে রাখার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মিয়ানমারের সাথে চুক্তি করেছি, সবরকম উদ্যোগও নিয়েছি এবং তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগও রাখছি। কিন্তু তাঁদের সাড়াটা পাইনি, সেটাই সমস্যা। মিয়ানমারই আগ্রহী নয়। আর এত লোক রাখা আসলেই সমস্যা।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সরকারী বাসভবন গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন সম্পর্কিত এক প্রশ্নের উত্তরে একথা বলেন। গত ২৮ মে থেকে ৭ জুন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর জাপান, সৌদি আরব এবং ফিনল্যান্ড সফর নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হলেও রোহিঙ্গাদের সফল প্রত্যাবাসন, জঙ্গি ইস্যু এবং বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা সহ সাম্প্রতিক নানা প্রসঙ্গ সাংবাদিকদের প্রশ্নে উঠে আসে। সকল প্রশ্নের অনুপুঙ্খ উত্তর দেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন বিদেশি সাহায্য সংস্থার কর্মকান্ড নিয়ে আশংকা ব্যক্ত করে বলেন, ‘সমস্যা যেটি আমি এখানে দেখি যেসব আন্তর্জাতিক সংস্থা এখানে ভলান্টিয়ারি সার্ভিস দিতে আসে বা যারা কাজ করে এরা কোনদিন চায় না যে, কোন রিফিউজি তাদের দেশে ফেরত যাক। এখানেই সমস্যাটা।’ শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আমরা পৃথকভাবে চিন, ভারত এবং জাপানের সঙ্গে কথা বলেছি এবং এরা প্রত্যেকেই এটা মেনে নেন যে, এরা মিয়ানমারের নাগরিক এবং এদের প্রত্যেকেরই মিয়ানমারে ফেরত যাওয়া উচিত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চুক্তি করলাম, তালিকা করলাম, তারপরে হঠাৎ এরা (রোহিঙ্গা) আন্দোলন করলো-এরা যাবে না। এই আন্দোলনের উস্কানিটা কারা দিল। আরেকটা হচ্ছে- তাদের সবসময় একটা ভয় সেখানে তাঁদের নিরাপত্তা বিঘিœত হতে পারে। কিন্তু আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রী গিয়ে দেখে এসেছেন সেখানে রাখাইন স্টেটে এখনো কিছু পরিবার অবশিষ্ট রয়েছে। কিন্তু, মূলত এই সংস্থাগুলি এরা কখনো চায়না যে রোহিঙ্গারা ফেরত যাক,’যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এখানে বিরাট অংকের ফান্ড আসে, সেখানে তারা চাকরী-বাকরী করছেন তারা চলে গেলেতো আর সেটা থাকবে না। তাছাড়া কেনই বা এটা হবে। মুশকিলটা হচ্ছে মিয়ানমারকে নিয়ে তারা কোনভাবেই এদের নিতে চাচ্ছে না। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
আগামী জুলাই মাসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক সামার সামিটে যোগদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী চিন সফরে যাবেন উল্লেখ করে বলেন, ‘তারাও চায় রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে ফেরত যাক। কিন্তু মিয়ানমার এদের নিতে চায় না, এখানেই সমস্যাটা।’ অপর এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চিন এবং ভারত দুটি দেশের সঙ্গেই আমাদের বন্ধুত্ব এবং আমরা সেই বন্ধুত্ব রক্ষা করেই চলছি।’
প্রধানমন্ত্রী এ সময় ভারত সফরে যাবেন বলেও সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে জানান। আর নরেন্দ্র মোদী তাঁকে দাওয়াত দেওয়ার প্রেক্ষিতে তিনিও তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বলেন তিনি। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম সাজেদা চৌধুরী, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাবৃন্দ, পদস্থ সরকারী কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং সংবাদ সংস্থার সম্পাদক এবং সিনিয়র সংবাদিকবৃন্দ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।