প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ওয়ান ইলাভেনের মত ঘটনার পুনরাবৃত্তির সম্ভবনাকে নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, সরকার আগে থেকেই দুর্ণীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে যাতে এ ধরনের ঘটনা পুণরায় না ঘটতে পারে। প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘ এটা বলাই যায় (স্পষ্টত) যে, ওয়ান ইলাভেন পুনরায় ঘটবে না। যদি কোন অনিয়ম থেকে থাকে, আমি ব্যবস্থা নেব, আমরা ব্যবস্থা নেব এবং সে যেই হোক না কেন, এমনকি তারা আমার দলের হলেও। যদি আমি দুর্ণীতিবাজদের শান্তি দিতে চাই, আমার ঘর থেকেই তা আগে শুরু করতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্থানীয় সময় রবিবার বিকেলে জাতিসংঘের ৭৪ তম অধিবেশনে যোগদান উপলক্ষ্যে নিউইয়র্কস্থ জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে একথা বলেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড.একে আব্দুল মোমেন এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিানিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন স্বাগত বক্তৃতা করেন এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। শেখ হাসিনা বলেন, প্রকল্প প্রস্তুতি থেকে শুরু করে প্রকল্পের কাজ পাওয়ার জন্য অর্থ বিতরণের সুযোগ নিয়ে কিছু লোক বিপুল সম্পদের মালিক বনে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই অর্থ চটের বস্তাতেও লুকিয়ে রাখা হচ্ছে এবং ওয়ান ইলাভেনের পট পরিবর্তনের পর আমরা এটা দেখেছি।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘হঠাৎ করে যে সম্পদ আসে তা দেখানো কিছু মানুষের স্বভাব। আমাদের সমাজের এই অংশটিকে আঘাত করতে হবে।’ জনগণের জন্যই তাঁর রাজনীতি এবং জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েই ক্ষমতায় এসেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন,‘আমি সব সময় জনগণের মঙ্গলের কথাই চিন্তা করি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কারণে আমার দল এবং সমাজের ওপর ক্ষতিকারক কোন প্রভাব পড়ছে কিনা সে বিষয়েও আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। আমাকে সেটা মোকাবেলাও করতে হবে। যে কারণে আমি এই অভিযান চালাচ্ছি (দুর্ণীতি বিরোধী)।’ কিছু লোক এই অভিযান পরিচালনায় তাঁর ওপর অখুশি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন,‘কিন্তু, আমি এটার পরোয়া করি না কেননা আমার ক্ষমতা এবং সম্পদের প্রতি কোন মোহ নেই।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘দুর্ণীতির বিরুদ্ধে অভিযান চলছে এবং চলবে।’ যদিও এজন্য কোন বিশেষ কমিটি গঠনের প্রয়োজন নেই বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন,‘দুর্ণীতির কোন তথ্য পেলেই আমরা এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি,আমরা জাতীয় নিরাপত্তা সেল গঠন করেছি এবং তাঁদেও সময় মত নির্দেশনা প্রদান করছি। এই অভিযান চলতে থাকবে এই নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি চান যে, দেশের প্রত্যেক মানুষের উন্নত ও সুন্দর জীবনযাপন করবে। এই সুযোগে কিছু সংখ্যক মানুষ সমাজকে বিষাক্ত করবে, এটা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। এ কারণে আমি এই নির্দেশ দিয়েছি।
তিনি বলেন, দেশে খেলাধূলার উন্নয়নে ক্রীড়াসামগ্রীর আমদানী খুবই ভালো। কিন্তু এটা অকল্পনীয় যে, ক্রীড়াসামগ্রী আমদানীর নামে জুয়ার জিনিসপত্র আনা হবে। শেখ হাসিনা বলেন, দেশে যে কোন ধরনের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টির তৎপরতা প্রতিরোধে সন্ত্রাসী ও জঙ্গীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়েছে। তিনি বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে এবং আমরা এই অভিযানে প্রায় সফলতার দ্বারপ্রান্তে। এখন আমরা দুর্ণীতিবিরোধী অভিযান শুরু করেছি।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে এবং এ লক্ষ্যে বহু প্রকল্প তৈরি ও এসব প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দকৃত অর্থ যথাযথভাবে ব্যয় হবে এবং এসব কাজও সম্পন্ন হবে নির্বিঘেœ। এতে কোন অনিয়ম হলে দেশের উন্নয়ন ব্যাহত হবে। এর ফলে আমরা যেভাবে দেশের উন্নয়নের চিন্তা করছি, তা সম্পন্ন হবে না।