ইসলামী পর্যটনকে ‘বিশ্ব বাণিজ্য ব্র্যান্ড’ হিসেবে গড়ে তুলতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা ও রোডম্যাপ প্রণয়নের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
সকালে রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে ওআইসি সিটি অব ট্যুরিজম-২০১৯’ উদযাপন উপলক্ষে দু’দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধনকালে তিনি এ আহ্বান জানান।
ওআইসি এবং এ সংগঠনভুক্ত দেশগুলোর উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ইসলামী পর্যটনকে ‘বিশ্ব বাণিজ্য ব্র্যান্ড’ হিসেবে গড়ে তুলতে হলে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা ও রোডম্যাপ থাকা জরুরি। ইসলামী পর্যটনের বিকাশে আন্তঃ-ওআইসি পর্যটক প্রবাহ বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে ভিসা সহজীকরণ, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, ব্র্যান্ডিং ও মানোন্নয়নের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, ওআইসি সদস্যভুক্ত রাষ্ট্রসমূহ পর্যটন খাতের অবকাঠামো ও উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য তাদের বেসরকারি খাতকে একক ও যৌথভাবে অংশগ্রহণের জন্য উৎসাহ প্রদান করবে।
ইসলামী পর্যটনের বিশাল আকার ও বিপুল সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ওআইসির ২০১৮ সালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বে মুসলিম ট্যুরিস্টের সংখ্যা ১৫৬ মিলিয়ন, যা ২০২০ সালে বেড়ে দাঁড়াবে ১৮০ মিলিয়ন। একই বছর সারাবিশ্বের জনসংখ্যার ২৬ শতাংশ হবে মুসলিম।
তিনি বলেন, থমসন-রয়টার্সের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৫ সালে ইসলামী পর্যটনের বাজার ছিল ১৫১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের, যার মধ্যে ওআইসিভুক্ত দেশসমূহের বাজার ছিল প্রায় ১০৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের। ইসলামী পর্যটনের বাজার বার্ষিক ৮ দশমিক ৩ শতাংশ হারে বেড়ে ২০২১ সাল নাগাদ ২৪৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়াবে।
নবরূপে বিকাশমান ইসলামী অর্থনীতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইসলামী অর্থনীতি’ বর্তমানে নবরূপে বিকাশ লাভ করছে। হালাল ফুডস, ইসলামী ফাইন্যান্স, হালাল ফার্মাসিউটিক্যালস এবং প্রসাধনী, হালাল পর্যটন ইত্যাদি ইসলামিক অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান খাত। এ খাতগুলো বিকাশের জন্য ওআইসি সদস্যভুক্ত রাষ্ট্রসমূহের সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতের সহযোগিতা ও অংশীদারিত্ব একান্ত প্রয়োজন।
শেখ হাসিনা বলেন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রে পুরো বিশ্বে পর্যটন একটি দ্রুতবর্ধনশীল খাত হিসেবে স্বীকৃত। বিশ্ব ভ্রমণ ও পর্যটন কাউন্সিলের তথ্য মতে, সব দেশেরই জাতীয় আয়ে পর্যটন খাতের অবদান বাড়ছে।
তিনি বলেন, বিপুল সম্ভাবনাময় পর্যটনকে ব্যবহার করে আমরা কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও জনগণের কাজের সুযোগ সৃষ্টির চেষ্টা করে যাচ্ছি। এছাড়া কমিউনিটিভিত্তিক পর্যটন ব্যবস্থা গড়ে তুলে দেশের বিভিন্ন এলাকার জনগণকে সরাসরি পর্যটনে সম্পৃক্ত করে তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্যও কাজ করছি।
বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের সমপর্যায়ে উপনীত হওয়ার লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘ ঘোষিত এসডিজি লক্ষ্য পূরণে আমরা বদ্ধপরিকর।
সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের স্বপ্নপূরণে পর্যটন খাতের বিকাশ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারে। এক্ষেত্রে ইসলামী পর্যটন আমাদের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় খাত, যেখানে আমাদের সবার একত্রে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।
ওআইসি রাষ্ট্রসমূহের পর্যটন শিল্পের বিকাশের জন্য সমর্থন ও সহযোগিতা পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
২০১৯ সালের ওআইসি পর্যটন নগরী হিসেবে ঢাকাকে নির্বাচিত করায় সদস্য রাষ্ট্রসমূহের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৯ সালের জন্য ওআইসি সদস্যভুক্ত রাষ্ট্রসমূহের পর্যটন নগরী হিসেবে ঢাকাকে নির্বাচিত করায় অত্যন্ত খুশি ও আনন্দিত। ঢাকা ওআইসি পর্যটন নগরী ২০১৯ এর মহা-উদযাপন অনুষ্ঠান ওআইসি সদস্যভুক্ত রাষ্ট্রসমূহের আন্তঃওআইসি পর্যটক প্রবাহ বৃদ্ধি এবং টেকসই পর্যটন উন্নয়নের ক্ষেত্রে সহযোগিতার নতুন দ্বার উন্মোচন করবে। যা প্রকারান্তে ওআইসি রাষ্ট্রসমূহের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
বাংলাদেশের বৈচিত্র্যপূর্ণ পর্যটন আকর্ষণের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের রয়েছে বৈচিত্র্যপূর্ণ পর্যটন আকর্ষণ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার, ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন, প্রাচীন ও আধুনিক প্রত্নতাত্ত্বিক ও ইসলামিক স্থাপনা ইত্যাদি বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ।
তিনি বলেন, বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে প্রায় চারশত বছরের প্রাচীন শহর ঢাকা গৌরবময় ইতিহাস ও ঐতিহ্যের জন্য সুপ্রসিদ্ধ। এখানে রয়েছে আহসান মঞ্জিল, লালবাগ কেল্লা, কার্জন হলসহ উল্লেখযোগ্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। আধুনিক স্থাপত্য নিদর্শনসমূহের মধ্যে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ, জাতীয় সংসদ ভবন, শহীদ মিনার, জাতীয় জাদুঘর অন্যতম।
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, ঢাকা মসজিদের শহর হিসেবে সুপ্রসিদ্ধ। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম-এর নকশা পবিত্র মক্কা নগরীর কাবা শরীফের আদলে তৈরি করা হয়েছে, যেখানে একসঙ্গে প্রায় চল্লিশ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। শুধু মুসলিমদের জন্যই নয়, অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের জন্য ঢাকায় রয়েছে বিখ্যাত আর্মেনিয়ান গির্জা, ঢাকেশ্বরী মন্দিরসহ সুন্দর সুন্দর স্থাপনা।