তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, দলমত নির্বিশেষে সব ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে। এক্ষেত্রে কে কোন দল বা মতের তা দেখা হচ্ছে না।
আজ সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বাংলাদেশ বেতার-টেলিভিশন শিল্পী সংস্থার সঙ্গে মতবিনিময় সভার শুরুতে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। সভায় তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডাক্তার মুরাদ হাসান উপস্থিত ছিলেন।
ড. হাসান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের এই পদক্ষেপের জন্য বিএনপি’র উচিত সরকারকে সাধুবাদ জানানো। কারণ, যেখানে মাদক বা ক্যাসিনো অথবা অনিয়ম দুর্নীতি ধরা পড়ছে তার বিরুদ্ধেই সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে। যা বিএনপি’র আমলে করা হয়নি। বরং বিএনপি’র শাসনামলে তারা দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছিল এবং হাওয়া ভবন বানিয়ে প্রত্যক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ১০ শতাংশ কমিশন নেয়াটাকে বাণিজ্যে পরিনত করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, যিনি লন্ডনে পলাতক তিনি ছিলেন অজগর সাপ। সব কিছুই খেয়ে ফেলতেন। সে জায়গায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সব অনিয়ম-দুর্নীতি এবং মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে অগ্রসর হচ্ছেন। এতে তো বিএনপি নেতৃবৃন্দের খুশি হওয়ার কথা এবং প্রধানমন্ত্রীকে সাধুবাদ দেওয়ার কথা আর তাদের ব্যর্থতার জন্য লজ্জা পাওয়ার কথা।
ড. হাসান বলেন, যাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দুর্নীতিতে নিজ্জিত ছিলেন, আর নিজেরা ক্ষমতায় থাকাকালে বাংলাদেশকে পরপর দুর্নীতিতে পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন বানানো বিএনপির দুর্নীতি নিয়ে কথা বলার কোন নৈতিক অধিকার নেই।
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে তথ্য মন্ত্রী বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার পরপর তিনবার রাষ্ট ক্ষমতায়। তাই, যেখানেই অনিয়ম পাওয়া যাচ্ছে সেখানেই ব্যবস্থা নিচ্ছে। এছাড়াও অনেক অনুপ্রবেশকারী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ে ঢুকে পড়েছে। তাদেরকে চিহ্নিতকরণের কাজ চলছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় হবে বলে তিনি জানান।
তথ্যমন্ত্রী এসময় সম্প্রতি তাঁর ভারত সফর বিষয়েও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, ভারতের ত্রিপুরা ও মেঘালয় রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে তার সাক্ষাত হয়। এসময় দুই মুখ্য মন্ত্রীই তাদের নিজ নিজ রাজ্যে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি স্থাপনের প্রস্তাবে সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন। এছাড়াও ত্রিপুরা রাজ্যের সাথে বাংলাদেশের রেল যোগাযোগ নিয়েও আলোচনা হয়েছে। আমি নিজে রেল যোগাযোগের কাজ সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি।
তিনি বলেন, সফরে কলকাতা প্রেস ক্লাবের ৭৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলাম। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় যেসব সাংবাদিক কাজ করেছিলেন তাদের অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা একটি বই নিয়ে আলোচনা হয়। এসময় সাত থেকে আটজন যুদ্ধকালীন সংবাদদাতাও উপস্থিত ছিলেন। তাদের স্মৃতি-চারণ শুনেছি।
বাংলাদেশের শিল্পীদের বিষয়ে তথ্য মন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীকার আন্দোলন থেকে শুরু করে প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শিল্পীদের ভূমিকা অনন্য। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানকে হত্যার পর গণতন্ত্রের পাঁয়ে যখন শেকল পরিয়ে রাখা হয়েছিল, তখনও শিল্পীরা গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা স্বপ্ন বুনেছি। এই স্বপ্ন পূরনে আমরা ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রে রূপান্তরিত হতে চাই।
কিন্তু বস্তুগত উন্নয়নের পাশাপাশি একটি মানবিক জাতি গঠন করতে হবে। আর এই মানবিক জাতি গঠনে শিল্পীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
তিনি বলেন, শিল্পীরা তাদের দক্ষতা দিয়ে অন্যদের বিনোদন দেন। কিন্তু তাদের নিজেদেরই রয়েছে অনেক দুঃখ। এজন্য শিল্পী সম্মানী ভাতা বাড়াতে হবে বলে তথ্য মন্ত্রী মত দেন।
ড. হাসান বলেন, ১৯৬৪ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) যাত্রা শুরু করে। কিন্তু কখনোই দেশের বাইরে বিশেষ করে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে দেখা যায়নি। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার গতিশীল এবং বিচক্ষণ নেতৃত্বেও কারণে এখন সেটি সম্ভব হয়েছে। এখন সমগ্র ভারতে বিনা খরচে বিটিভি দেখা যাচ্ছে।
এছাড়াও বিটিভির পুরনো বেশ কিছু জনপ্রিয় অনুষ্ঠান যেমন-বির্তক প্রতিযোগিতা, নতুন কুঁড়ি প্রভৃতি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এখন সেসব অনুষ্ঠান পুনরায় চালুর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সমাজকে মাদক এবং জঙ্গিমুক্ত করতে শিল্পিরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
সভায় বাংলাদেশ বেতার-টেলিভিশন শিল্পী সংস্থার সভাপতি ড. ইনামুল হক এবং সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আজম বাশার বক্তৃতা করেন।